প্যারিসে চলমান প্যারা অলিম্পিক যেন ভারতীয় ক্রীড়া মহলে নতুন ভোরের বার্তা নিয়ে এসেছে। এই টুর্নামেন্টে ব্লু ব্রিগেডদের একের পর এক পদক জয় দেশবাসীকে ক্রিকেটের বাইরেও একাধিক খেলার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে। এর সঙ্গেই শারীরিক এবং মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকা এই ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের হার না মানার লড়াইয়ের গল্প ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিটি প্রান্তে। এবার এর মধ্যেই প্যারালিম্পিকে পদক জয় করে নাগাল্যান্ডের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে ইতিহাস তৈরি করলেন হোকাতো সেমা।
চলমান প্যারিস প্যারা অলিম্পিকে পুরুষদের শটপুট এফ ৫৭ বিভাগে ভারতের হয়ে হোকাতো সেমা মাঠে নামেন। এই বিভাগে তিনি ১৪.৬৫ মিটার ব্যক্তিগত সেরা থ্রো করে ব্রোঞ্জ পদক ছিনিয়ে নেন। হোকাতো তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে আজারবাইজানের ওলোখান মুসায়েভের ১৩.৪৯ মিটারের আগের প্যারালিম্পিক রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন। তবে ইরানের ইয়াসিন খোসরাভি ১৫.৯৬ মিটার থ্রো করে স্বর্ণপদক দাবি করেন। এর সঙ্গেই ব্রাজিলের থিয়াগো পাওলিনো ডস সান্তোস ১৫.০৬ মিটার থ্রো করে রৌপ্য পদক জয় করে নিয়েছেন।
কে এই হোকাতো সেমা?
প্যারিস প্যারা অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জয়ের পর হোকাতো সেমার এক অজানা অদম্য লড়াইয়ের গল্প সামনে উঠে এসেছে। তিনি ১৯৮৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র কৃষক পরিবারে সেমা চার সন্তানের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয় বড়ো ভাই। ছোটবেলা থেকেই হোকাতোর দেশ সেবা করার প্রতি একটা আবেগ ছিল। তিনি বিশেষ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে ভারতীয় এই ক্রীড়াবিদ সেনাবাহিনীর আসাম ৯ রেজিমেন্টের হাবিলদার হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
কিন্তু ২০০২ সালের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তার জীবনে বিশাল বড়ো মোড় নিয়ে আসে। জম্বু কাশ্মীরের এলওসিতে একটি সামরিক অভিযানের সময় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে হোকাতো সেমা তার হাঁটুর নীচের বাম পা হারান। ফলে বিশেষ বাহিনীতে যোগদানের স্বপ্ন মূহুর্তেই শেষ হয়ে যায়। এরপরও তিনি থেমে থাকেননি উঠে দাঁড়িয়ে নতুন করে জীবনকে আবার শুরু করেন। এরপর ৩২ বছর বয়সে সেমা বেছে নেন শটপুট খেলা। তিনি কোচ রাকেশ রাওয়াতের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। উল্লেখ্য হোকাতো সেমা এখনও ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি অংশ এবং বর্তমানে পুনেতে কর্মরত রয়েছেন।